জালালি কবুতর সম্পর্কে প্রচলিত গল্পের বাস্তবতা এবং খাওয়ার বিধান

জালালি কবুতর

প্রশ্ন: সিলেটের শাহজালাল মাজারে যে সব কবুতর আছে সেগুলো জালালি কবুতর নামে পরিচিত। এ সব কবুতর নিয়ে অনেকেই অনেক রকম গল্প বলে থাকে। আরও বলা হয় যে, “এ সব কবুতর খাওয়া নাকি হারাম।” এ কথাটা কি ঠিক?
উত্তর:
❐ জালালি কবুতর সম্পর্কে গল্প/কাহিনী:

সিলেটের শাহজালাল মাযারের কথিত জালালি কবুতর সম্পর্কে যে সব গল্প/কহিনী লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে সেগুলোর বাস্তবতা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে প্রথম আলো পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়:

“কথিত আছে, সিলেটে আসার পথে হজরত শাহজালাল রহ. ১৩০১ সালে যখন দিল্লি পৌঁছান, তখন হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহ. তাঁর হাতে নীল ও কালো রঙের একজোড়া কবুতর উপহার দেন। হজরত শাহজালাল রহ. ৩৬০ জন আউলিয়া নিয়ে ১৩০৩ সালে তৎকালীন আসামের অন্তর্ভুক্ত সিলেট (শ্রী হট্ট) জয় করে উড়িয়ে দিয়েছিলেন সেই কবুতর জোড়া। শাহজালালের হাত থেকে আকাশে উড়েছে বলে কবুতর বা কইতর বলার আগে সম্মোহিত হচ্ছে ‘জালালি’ নামে।” [সূত্র: প্রথম আলো-অনলাইন সংস্করণ, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪]

লক্ষ্য করুন, এখানে জালালি কবুতর সম্পর্কে তথ্য দেয়া শুরু হয়েছে ‘কথিত আছে’ বলার মাধ্যমে। তার মানে, গবেষক এ সব গল্পের নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র খুঁজে পায় নি। সুতরাং কথিত কথা নিয়ে কথা না বলে এটাকে সেভাবেই রেখে দেয়াই উত্তম। মনের মধ্যে এ সব গল্পের প্রতি ঈমান আনয়নের কোন প্রয়োজন নাই।

দৈনিক যুগান্তরে (অনলাইন সংস্করণ) জাকির হোসেন রাজু নামক এক লেখক এ প্রসঙ্গে ভিন্ন একটি গল্প লিখেছেন। তা হল নিম্নরূপ:

“জানা যায়, শাহজালালকে রাহ. নিয়ে দিল্লির নিজামুউদ্দিন আউলিয়ার কাছে তার এক শিষ্য কুৎসা রটনা করলে তিনি তাকে দরবার থেকে বিতাড়িত এবং শাহজালাল রাহ. সালাম পাঠায়, তখন শাহজালাল রাহ. একটি বাক্সে প্রজ্বালিত অঙ্গারের সঙ্গে কিছু তুলা পাঠান, যা ছিল একটি আধ্যাত্মিক নিদর্শন। এর পর তাদের সাক্ষাৎ হয় এবং শাহজালাল রাহ. ফিরে আসার সময় ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ নিজামুদ্দীন আউলিয়া তাকে একজোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দেন, যা আজকের জালালি কবুতর বা জালালি কইতর নামে পরিচিত।” [সূত্র: দৈনিক যুগান্তর-অনলাইন সংস্করণ, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮]

খেয়াল করুন, এখানেও লেখক শুরু করেছেন, “জানা যায়” দ্বারা। অর্থাৎ “জানা যায়”, ”শোনা যায়” “কথিত আছে”, “লোকমুখে প্রচলিত আছে”….এগুলোই হল, এসব গল্পের ভিত্তি! এগুলোর পেছনে না আছে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য, না আছে উপাত্ত। সুতরাং এসব গল্পকে গল্প হিসেবে রেখে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এগুলোকে ঐতিহাসিক ‘সত্য ঘটনা’ বলার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
তাছাড়া সিলেটের জালালি কবুতর সম্পর্কে উপরোক্ত দুটি গল্পের মধ্যে দূরতম কোনও মিল নাই। সুতরাং এগুলোকে শাহজালাল রাহ.-এর ভুক্তকুল কিংবা মাজার ব্যবসায়ীদের মিথ্যাচার বলা মোটেই অত্যুক্তি হবে না। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন)

❐ জালালি কবুতর খাওয়া কি হারাম?

একমাত্র হারামাইন তথা মক্কা ও মদিনায় কোন পশু-পাখি শিকার করা হারাম- এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন স্থানের হালাল পশু-পাখি শিকার করা বা সেগুলোর গোস্ত খাওয়ার হারাম বলা-আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে ধৃষ্টতা প্রদর্শন ছাড়া কিছু নয়। কবর পুজারী, বিদআতি ও মূর্খ সুফি ছাড়া এমন কথা কেউ বলতে পারে না। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *