আন্তর্জাতিক বাজারে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন প্রকার সারের দাম চরমপর্যায়ে বেড়ে গেছে। আর পাশাপাশি বাংলাদেশেও সারের দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে দেশের কৃষকদের মাঝে চরম হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। কেননা কৃষি চাষে এমনিতেই খরচ বেশি হয়ে থাকে তার মধ্যে সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা নানাভাবে কৃষি কাজে যে অর্থ খরচ হয় তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কৃষকদের মাঝে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সারের দাম বৃদ্ধির জন্য কৃষকরা চাষাবাদ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। অনেকেই কৃষি চাষ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যেটা দেশের জন্য বিরাট হুমকিস্বরূপ। আর এই সার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর বাংলাদেশের বাজারে আন্তর্জাতিক বাজারের থেকে এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই আজকের এই পোস্টে বিভিন্ন প্রকার সারের দাম ২০২৪ আপনাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি ইউরিয়া সারের দাম,টিএসপি সারের দাম,ডিএপি সারের দাম ইত্যাতি আপনাদের কে জানিয়ে দেওয়া হবে আজকের এই পোষ্টে।
বিভিন্ন প্রকার সারের দাম
বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেক বেশি পরিমাণে সার প্রয়োজন হয়। প্রতিবছর ২৬ লাখ টন ইউরিয়া লাগে, টিএসপি সাড়ে সাত লাখ টন, ডিএপিপি সাড়ে ১৬ লাখ টন এবং এমওপি সাড়ে সাত লাখ টন লাগে। এর মাঝে বর্তমানে ইউরিয়া, পটাশ সারের সংকট দেখা দিচ্ছে। কিন্তু সরকার জানায় যে যথেষ্ট পরিমান সার দেশে মজুদ রয়েছে। কিন্তু কৃষকরা সার কিনতে গেলে দোকানিরা তা বিক্রি করছে না ,মজুদ করে রেখে দিচ্ছে। ফলে কৃষকদের মাঝে সারের সংকট দেখা দিয়েছে।
আর কিছু সার বিক্রি হলেও নির্ধারিত দামের থেকে একটু বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।যেখানে এই সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে কৃষকরা বিপাকে পড়ে গিয়েছেন। যেখানে এই চাষাবাদ করতে অনেক টাকা খরচ হয় সেখানে সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের কাছে হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না। ইউরিয়া ,পটাশ ,টিএসপি জিএপি ইত্যাদি সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সারের সঠিক দাম নিয়ে নিম্নে আলোচনা করেছি।
আজকের সারের দাম ২০২৪
ইউরিয়া সারের দাম প্রতি কেজি ৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে । এজন্য কৃষকদেরকে প্রতিকেজি 22 টাকা ধরে সার কিনতে হচ্ছে। ডিলার পর্যায়ে 20 টাকা আর কৃষকদের কিনতে হচ্ছে 22 টাকা ধরে। আরো জানা যায় বর্তমানে বিভিন্ন উপজেলায়, প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার ১২০০-১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার জি এ পি সার ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আবার এমওপি ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ৩০০ হতে ১ হাজার ৪০০ ও টিএসপি ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ হতে ১ হাজার ২৫০ টাকা দরে কৃষকদের কিনতে হচ্ছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার কিনতে চাইলে সার সংকটের অজুহাতে কৃষকদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
পটাশ সারের দাম ২০২৪
বাংলাদেশে পটাশ সারের সংকট অনেক বেড়ে গেছে। যে জন্য পূর্বের তুলনায় বর্তমানে পটাশ সারের দাম অনেক বেশি। দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এর পেছনের কারণ পটাশ সার বাজারে সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সুযোগে যতটুকু সার পাওয়া যায় তা তার দ্বিগুণ দাম রাখা হচ্ছে কৃষকদের কাছ থেকে। তবে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি করতে যাচ্ছে ।আশা করা যাচ্ছে সামনে মৌসুম থেকে এসব সারের সংকটে পড়তে হবে না কৃষকদের। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সার পাওয়া যায়, তার মধ্যে পটাশ সারের প্রয়োজনীয়তা অনেক । এই পটাশ সার কে বিভিন্ন সারের সাথে মিশিয়ে জমিতে ব্যবহার করা হয়।
বাজারে প্রতি কেজি প্রায় ৪৫ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ গ্রাম পটাশ সারের মূল্য ২৫ টাকা ধরা হয়। আবার এক কেজি পটাশ সার কোন কোন দোকানে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । ৫০ কেজির এক বস্তা পটাশের সরকার নির্ধারিত দাম ৭০০ টাকা হলেও অনেকেই বিক্রি করছেন ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা।যেখানে কৃষকের কাছে অনেক বেশি মূল্যে সার বিক্রি করা হচ্ছে।
- ১ কেজি পটাশ সারের দাম ৪৫ টাকা।
- ৫০০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ২৫ টাকা
- ৫০ কেজির বস্তা রায় ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা।
ইউরিয়া সারের দাম
যে কোন প্রকার চাষাবাদ করতে গেলে ইউরিয়া সারের অনেক বেশি প্রয়োজন। প্রতিবছর ২৬ লাখ টন ইউরিয়া চাষাবাদের জন্য কৃষি জমিতে ব্যবহার হয়। কয়েক মাস আগে ইউরিয়া সারের প্রতি কেজি দাম ছিল 14 থেকে 16 টাকা। কিন্তু বর্তমানে আগষ্ট মাস থেকে ইউরিয়া সারের দাম বাড়িয়ে 20 থেকে 22 টাকা মূল্যে করা হয়েছে। যেখানে কৃষকদের লোকসান হওয়ার আশঙ্কা আরো বেশি বেড়ে গেছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি ইউরিয়ার সারের বর্তমান দাম ৮১ টাকা। এর ফলে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির পরও সরকারকে প্রতিকেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি প্রদান করতে হবে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রতিকেজি ইউরিয়া সারের ভর্তুকি ছিল মাত্র ১৫ টাকা।
- প্রতি কেজি ২২ টাকা
- প্রতি বস্তায় ৮০০ টাকা
- কৃষকদের কাছে প্রতি বস্তায় বিক্রি হয় ১২০০-১৩০০ টাকা
টিএসপি সারের দাম
সকল প্রকার সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি টিএসপি সারের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য ঘোষিত হলেও কৃষকরা সেই নির্ধারিত দামে টিএসপি সার পাচ্ছে না। টিএসপি সারের প্রতি বস্তা মূল্য ১১০০ টাকা। কিন্তু বাজারে প্রায় দামের থেকে ২০০-৩০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে কৃষকদের কাছে। আর প্রতি কেজি টিএসপি সারের মূল্য ২২ টাকা।
- প্রতি কেজি ২২ টাকা
- প্রতি বস্তায় ১১০০ টাকা
- কৃষকদের কাছে প্রতি বস্তায় বিক্রি হয় ১২০০-১৩৫০ টাকা
এম,ও,পি সারের দাম
ইউরিয়া, টিএসপি, জিএপি, পটাশ সারের মতোও এই এমওপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকদের প্রয়োজনে কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। এম,ও,পি প্রতি বস্তা সরকার নির্ধারিত মূল্য ৭৫০ টাকা কিন্তু বাজারে কৃষকদের কাছে প্রায় হাজারের টাকার উপরে বিক্রি করা হচ্ছে। যথা প্রতি কেজি এম,ও,পি সারের মূল্য ধরা হচ্ছে ১৫ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ টাকার বেশি রাখা হচ্ছে। যা কৃষকদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল।
- প্রতি কেজি ১৫ টাকা
- প্রতি বস্তায় ৭৫০ টাকা
- কৃষকদের কাছে প্রতি বস্তায় বিক্রি হয় ১১০০-১২০০ টাকা
জিএপি সারের দাম
ডিএপি সারের মূল্য প্রতি বস্তা ১৩৫০ টাকা । আর প্রতি কেজি 27 টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। যেখানে ডিলাররা কৃষকদের কাছ থেকে অনেক বেশি ধরে বিক্রি করছে। প্রতি বস্তায় কৃষকদের কাছ থেকে প্রায় 200 থেকে 300 টাকার বেশি বিক্রি করছে। অর্থাৎ প্রায় প্রতিবস্তা ১৫০০ টাকাও বিক্রি করছে।
- প্রতি কেজি 27 টাকা
- প্রতি বস্তায় ১৩৫০
- কৃষকদের কাছেপ্রতি বস্তায় বিক্রি হয় ১৮০০-১৫০০ টাকা
শেষ কথা
বাংলাদেশের সারের দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটা কৃষকদের জন্য অনেক হয়রানি মূলক একটা ব্যাপার। এই সব সারের দাম বৃদ্ধির জন্য দেশে কৃষিভিত্তিক যে সব পণ্য রয়েছে সেগুলোর দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের দামও বৃদ্ধি পেতে পারে। আর বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার সারের দাম ২০২৪ নিয়ে উপরে আলোচনা করেছি। আশা করব সম্পূর্ণ পোস্ট করলে সারের সঠিক দাম গুলো নিতে পারবেন।ধন্যবাদ